আঞ্চলিক ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ের শুদ্ধাচার কৌশল
কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন নির্দেশিকা, ২০২৩-২৪
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আঞ্চলিক ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ের শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন নির্দেশিকা, ২০২৩-২৪
১। প্রেক্ষাপট
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করেছে। এ কৌশলের মূল লক্ষ্য হল শুদ্ধাচার চর্চা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রণীত কৌশলে শুদ্ধাচারকে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণগত উৎকর্ষ এবং কোন সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদণ্ড, প্রথা ও নীতির প্রতি আনুগত্য হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এ কৌশলে রাষ্ট্র ও সমাজে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা সরকারের সাংবিধানিক ও আইনগত স্থায়ী দায়িত্ব; সুতরাং সরকারকে অব্যাহতভাবে এই লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে মর্মে উল্লেখ আছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ ১ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ৩০ জুন ২০১৬ মেয়াদের জন্য শুদ্ধাচার কর্ম-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণ কাঠামো প্রণয়ন করে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছর হতে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার পাশাপাশি আওতাধীন দপ্তর/সংস্থা এবং মাঠ পর্যায়ের বিভাগীয়/আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহ শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কাঠামো প্রণয়ন করে আসছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মত শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনায় সম্পাদিত কাজের বিপরীতে নম্বর প্রদান ও সে আলোকে প্রাথমিকভাবে মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনায় সম্পাদিত কাজের বিপরীতে নম্বর প্রদান ও সে আলোকে মূল্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে।
সকল আঞ্চলিক ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয়সমূহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রণীত এ নির্দেশিকা অনুসরণপূর্বক স্ব স্ব কার্যালয়ের শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। তবে উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয়সমূহের জন্য কর্মপরিকল্পনার সকল কার্যক্রম প্রযোজ্য হবে না। উপজেলার জন্য প্রযোজ্য কার্যক্রম এবং এর বিপরীতে নির্ধারিত সূচকের মান *** চিহ্নিত করে দেখানো হলো।
শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনায় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা, ক্রয়ের ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার এবং শুদ্ধাচার সংশ্লিষ্ট ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক কার্যক্রম এই ৩ (তিন) টি ক্ষেত্রে কার্যক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে:
ক্রমিক ১: প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা
১.১ নৈতিকতা কমিটির সভা
নৈতিকতা কমিটির কার্যপরিধির আলোকে সভার আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করতে হবে। কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সেক্টরে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য এবং অন্তরায় চিহ্নিতকরণ, পরিলক্ষিত অন্তরায় দূরীকরণের জন্য সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাদের উপর ন্যস্ত থাকবে তা নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট সেক্টরে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় গৃহীত কর্মপরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এসকল বিষয় এজেন্ডাভুক্ত করে সভা আয়োজন করতে হবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুবিধার্থে প্রতি ত্রৈমাসিকের প্রথম মাসেই সভা আয়োজন করতে হবে। শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনসমূহ নৈতিকতা কমিটির সভায় অনুমোদিত হতে হবে বিধায় প্রতি কোয়ার্টারে ন্যূনতম ১টি করে নৈতিকতা কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে এবং এর লক্ষ্যমাত্রা ১.১ নম্বর ক্রমিকের ৬ নম্বর কলামে উল্লেখপূর্বক ৮-১১ কলামসমূহে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে উক্ত লক্ষ্যমাত্রা বিভাজন করে প্রদর্শন করতে হবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতি: প্রতি ত্রৈমাসিকে ১টি করে সভা অনুষ্ঠিত হলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যাবে। কোন ত্রৈমাসিকে সভা আয়োজন করা সম্ভব না হলে ঐ ত্রৈমাসিকের জন্য কোন নম্বর পাওয়া যাবে না।
প্রমাণক: নৈতিকতা কমিটির সভার কার্যবিবরণী।
১.২ সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের (Stakeholder) অংশগ্রহণে সভা
আঞ্চলিক ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ের উদ্যোগে অংশীজনের অংশগ্রহণে সভা আহ্বান করতে হবে এবং ১.৩ নম্বর ক্রমিকের ৬ নম্বর কলামে এর লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করতে হবে এবং ৮-১১ কলামসমূহে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে উক্ত লক্ষ্যমাত্রা বিভাজন করে প্রদর্শন করতে হবে। উল্লেখ্য, অংশীজন (stakeholder) বলতে স্ব স্ব আঞ্চলিক ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ/দাপ্তরিক/নাগরিক সেবা গ্রহণকারী যেকোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান (সরকারি/বেসরকারি), সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং আওতাধীন কার্যালয়সমূহ কিংবা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বুঝাবে। অংশীজনের অংশগ্রহণে কমপক্ষে ২ টি সভা করতে হবে। এ সভায় আবশ্যিকভাবে সিটিজেন চার্টার, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা এবং তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে। অংশীজনের সভায় আবশ্যিকভাবে সেবাগ্রহীতার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতি: অংশীজনের অংশগ্রহণে সভা আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন শতভাগ হলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যাবে। তবে অর্জন শতভাগ না হলে গাণিতিকহারে নম্বর কর্তন হবে।
প্রমাণক: অংশীজনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভার রেকর্ড নোটস এবং হাজিরা।
১.৩ শুদ্ধাচার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ/মতবিনিময় সভা আয়োজন
নিজ কার্যালয় এবং আওতাশীন কার্যালয়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য শুদ্ধাচার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে হবে এবং এর লক্ষ্যমাত্রা ১.৪ নম্বর ক্রমিকের ৬ নম্বর কলামে উল্লেখ করতে হবে। ৮-১১ কলামসমূহে প্রযোজ্য কোয়ার্টারে উক্ত লক্ষ্যমাত্রা প্রদর্শন করতে হবে। কর্মকর্তা কর্মচারির সংখ্যার উপর নির্ভর করবে কতটি ব্যাচে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতি: লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সকল কর্মকর্তা/কর্মচারিকে শুদ্ধাচার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যাবে। তবে অর্জন শতভাগ না হলে গাণিতিকহারে নম্বর কর্তন হবে। প্রশিক্ষণ আয়োজনসহ শুদ্ধাচার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সকল ব্যয় নির্বাহের জন্য কোড নম্বর ৩২৫৭১০৬ এ বরাদ্দ নিতে হবে। এছাড়া শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদানের জন্য ৩২১১১০১ নম্বর কোডে বাজেট বরাদ্দ নিতে হবে।
প্রমাণক: প্রশিক্ষণের নোটিশ, হাজিরা ও ছবি।
১.৪ কর্ম-পরিবেশ উন্নয়ন (টিওএন্ডইভুক্ত অকেজো মালামাল নিষ্পত্তিকরণ/নথি বিনষ্টকরণ/পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি/মহিলাদের জন্য পৃথক ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা/প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মচারীদের দাপ্তরিক পোষাক সরবরাহ ও পরিধান নিশ্চিত করা ইত্যাদি)
আঞ্চলিক ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয়সমূহ স্ব স্ব কার্যালয়ে কর্ম-পরিবেশ উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম যেমন: টিওএন্ডইভুক্ত অকেজো মালামাল নিষ্পত্তিকরণ/নথি বিনষ্টকরণ/পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি/মহিলাদের জন্য পৃথক ওয়াশরুমের ব্যবস্থা/প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মচারীদের দাপ্তরিক পোষাক সরবরাহ ও পরিধান নিশ্চিত করা ইত্যাদি গ্রহণ করবে। কার্যক্রমের সংখ্যা ও সম্পন্ন করার তারিখ নির্ধারণ করে লক্ষ্যমাত্রা ১.৫ ক্রমিকের ৬ নম্বর কলামে উল্লেখ করতে হবে এবং ৮-১১ কলামসমূহে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে উক্ত লক্ষ্যমাত্রা বিভাজন করে প্রদর্শন করতে হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রত্যেক কার্যালয় কর্মপরিবেশ উন্নয়ন সংক্রান্ত কমপক্ষে ২ টি কার্যক্রম গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, কর্ম-পরিকল্পনা প্রেরণের সময় নির্বাচিত কার্যক্রমের নাম, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও প্রমাণক হিসাবে কি সরবরাহ করা হবে তার বিবরণ পৃথক সংযুক্তিতে দিতে হবে।
সংযুক্তি নিম্নরূপ হবেঃ
ক্রমিক নং |
কার্যক্রমের নাম |
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া |
প্রমাণক হিসাবে যা থাকবে |
|
|
|
|
|
|
|
|
মূল্যায়ন পদ্ধতি: ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গৃহীত কর্ম-পরিবেশ উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের সংখ্যা ও কার্যক্রম সম্পন্ন করার তারিখের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যাবে।
প্রমাণক: ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, সংশ্লিষ্ট পত্র, অকেজো মালামাল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভার কার্যবিবরণী, নথি বিনষ্টকরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভার কার্যবিবরণী, কর্মচারীদের দাপ্তরিক পোষাক সরবরাহের কার্যাদেশ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ছবি ও অন্যান্য প্রমাণক।
ক্রমিক ২: ক্রয়ের ক্ষেত্রে শুদ্ধাচারঃ
২.১ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ক্রয়-পরিকল্পনা ওয়েবসাইটে প্রকাশ
পিপিএ ২০০৬-এর ধারা ১১(২) ও পিপিআর ২০০৮-এর বিধি ১৬(৬) অনুযায়ী সরকারের রাজস্ব বাজেটের অধীনে কোন ক্রয়কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান অর্থবছরের প্রারম্ভে বার্ষিক ক্রয়-পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে এবং অনুমোদিত ক্রয় পরিকল্পনা ৩১ জুলাই ২০২৩ তারিখের মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে । পিপিআর-২০০৮ এর তফসিল ৫ এ বর্ণিত ফর্ম অনুসরণ করে ক্রয় পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতি: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রারম্ভে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বার্ষিক ক্রয়-পরিকল্পনা(পিপিআর-২০০৮ এর তফসিল ৫ এ বর্ণিত নির্ধারিত ফর্মে) প্রস্তুত করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যাবে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ক্রয় পরিকল্পনা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে না পারলে কোন নম্বর পাওয়া যাবে না।
প্রমাণক: অফিস আদেশ ও স্ব স্ব ওয়েবসাইট।
ক্রমিক ৩ঃ শুদ্ধাচার সংশ্লিষ্ট এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক কার্যক্রম
৩.১ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে রেজিষ্টারে প্রদেয় সেবার বিবরণ ও সেবাগ্রহীতার মতামত সংরক্ষণঃ
সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে যে সকল সেবা প্রদান করা হয় সে সকল সেবা যারা গ্রহণ করছেন সেই সেবাগ্রহীতাদের মতামত গ্রহণের জন্য রেজিষ্টার সংরক্ষণ করতে হবে। রেজিষ্টারে সেবার মান সম্পর্কে মতামত দেয়ার জন্য সেবাগ্রহীতাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ছকে রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে।
ছক:
ক্রমিক নম্বর |
গৃহীত সেবার নাম |
সেবাগ্রহীতার নাম,ঠিকানা, পেশা ও মোবাইল নম্বর |
সেবাগ্রহীতার মতামত |
|
|
|
|
মূল্যায়ন পদ্ধতি: সেবাগ্রহীতাদের মতামত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যাবে
প্রমাণক: সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারের সত্যায়িত ফটোকপি।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS